বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম (বিএনএইচ) দেশের উদ্ভিদ প্রজাতির উপর মাঠ পর্যায়ে পরিচালিত জরীপের মাধ্যমে প্রাপ্ত যাবতীয় তথ্য-উপাত্তসহ শুষ্ক উদ্ভিদ নমুনা সংরক্ষণ এবং শ্রেণীবিদ্যা বিষয়ক গবেষণার একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। ন্যাশনাল হারবেরিয়াম পুঙ্খাণুপুঙ্খ অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি অঞ্চল থেকে ফুল-ফল সমেত সকল উদ্ভিদ প্রজাতির নমুনা, উহাদের প্রাচুর্য, প্রাপ্তিস্থান, প্রচলিত ব্যবহার ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্যাদিসহ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ, সনাক্ত ও শ্রেণীবিন্যাস করে সংরক্ষণ করে থাকে। হারবেরিয়ামে সংরক্ষিত ঐ সকল নমুনা দেশীয় উদ্ভিদ প্রজাতি ও বৈচিত্র্য সঠিকভাবে সনাক্তকরণের এবং মূল্যায়নের অন্যতম ভিত্তি। হারবেরিয়ামে সংরক্ষিত উদ্ভিদ নমুনাসমূহ জাতীয় সম্পদ হিসেবে বংশপরাম্পরায় শত-সহস্র বছরব্যাপী রেফারেন্স মেটেরিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হারবেরিয়াম উদ্ভিদবিদ্যার চর্চা, কৃষিজ, বনজ, ভেষজ সম্পদসহ বিলুপ্তির আশংকাযুক্ত উদ্ভিদ প্রজাতির উপর গবেষণা, পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ এবং দেশের উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের পরিসংখ্যান নিরূপনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে ‘‘বোটানিক্যাল সার্ভে অব ইস্ট পাকিস্তান’’ শীর্ষক একটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম এর প্রাথমিক কাঠামো বিনির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর প্রকল্পটি ‘‘বোটানিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ’’ নামে প্রথমে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং পরে বন, মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়ন লাভ করে। অত:পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৫ সালের ১ জুলাই থেকে ইহা ‘‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম’’ নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরবর্তীকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক নির্বাহী আদেশে ১ জুলাই ১৯৯৪ থেকে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম জনবলসহ কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে স্থানান্তরিত হয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সরাসরি অধীনে ন্যাস্ত হয়। বিগত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০০০ তারিখে তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের আর্থিক সহায়তায় মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান প্রাঙ্গনে ১.২৪ একর জমির উপর নির্মিত আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়ামের স্থায়ী ভবনের উদ্বোধন করেন। ১৯৯৯ সালের ১ জুলাই থেকে জনবলসহ ন্যাশনাল হারবেরিয়ামকে রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তরিত করা হয় এবং ২০০৪ সালে ১৬ অক্টোবর হারবেরিয়ামকে পরিদপ্তর হিসেবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত দপ্তর (Attached Department) ঘোষণা করা হয়।